রিপোটার চাঁদপুরঃ
তীব্র জনবল সংকটে এক প্রকার খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলছে চাঁদপুর ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট সরকারি জেনারেল হাসপাতালটি।
চাঁদপুর সদর জেনারেল হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়,বরাদ্দকৃত ৩৯৯টি পদের বিপরীতে বর্তমানে আছে ২৬৬ জন। ১৩৩ পদই শূন্য রয়েছে। এর মধ্যে চিকিৎসকের ২৩টি এবং নার্সের শুন্য পদ ৪৮টি। এছাড়া তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির পদ শূন্য আছে ৩৩টি এবং আউটসোর্সিংয়ের চতুর্থ শ্রেণির জনবল শূন্য রয়েছে ২৯টি। এই বিপুল সংখ্যক জনবল সংকট নিয়ে জেলার সরকারি এই সর্বোচ্চ চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানটি বলতে গেলে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলছে। কর্তৃপক্ষকে হিমশিম খেতে হয় হাসপাতালটি চালাতে।
চাঁদপুর জেনারেল হাসপাতালটি বর্তমানে রোগী ধারণ ধারণা ক্ষমতার বাইরে অতিরিক্ত রোগী ধারণ করতে হচ্ছে। যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজ হওয়ার কারণে আশপাশের শরীয়তপুর, লক্ষ্মীপুর, মাদারীপুরসহ কয়েকটি জেলা থেকেও রোগী আসে এই হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে। সরজমিন খোঁজনিয়ে জানাযায়,গত ক’মাস যাবত এই হাসপাতালে রোগী গড়ে ভর্তি থাকে প্রায় চার শ’র মতো। হাসপাতালের বেড ছাপিয়ে ফ্লোর, করিডোর, বারান্দা কোথাও ফাঁকা জায়গা নেই রোগী ছাড়া। অতিরিক্ত বেড বসিয়ে রোগীভর্তি থাকতে দেখা যায়। আর আউটডোরের কথা তো বলার অপেক্ষাই রাখে না। প্রতিদিন এক ভয়াবহ চিত্র দেখা যায়। সকাল ৮টার আগ থেকেই শত শত নারী-পুরুষ রোগী টিকিট কাউন্টার এবং ঔষধের কাউন্টারে লাইন ধরে থাকে ডাক্তার দেখানোর জন্যে। এতো বিপুল সংখ্যক রোগীর চাপের মাঝে চিকিৎসক এবং নার্সের তীব্র সংকটের কারণে রোগীদের চিকিৎসা সেবা দিতে কর্তৃপক্ষকে গলদঘর্ম অবস্থায় পড়তে হয়।
এদিকে একবছরের বেশি সময় ধরে চাঁদপুর সরকারি হাসপাতালের ডিজিজাল এক্স-রে বন্ধ রয়েছে।
এ বিষয়ে সহকারী রেজিস্টার ও অর্থপেডিক বিশেষজ্ঞ ডা. ফরিদ আহমেদ চৌধুরী বলেন, চাঁদপুর সরকারি জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসক ও জনবল সংকটের মধ্যদিয়েও শতভাগ চিকিৎসা সেবা দেওয়া হচ্ছে। যেখানে প্রতিটি ওয়ার্ডে ডাক্তার থাকার কথা সেখানে কিছু পদ খালি রয়েছে। এছাড়া ইমারজেন্সীতে মাত্র ৩জন কাজ করছে। যেখানে কমপক্ষে ১৫ জন দরকার। অপরদিকে মাস্টার রুলে সব মিলিয়ে দেড়শ জনের মত লোকবল প্রয়োজন। এসব স্থানগুলো পূরণ হলে এখানে চিকিৎসা সারাদেশে শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন করবে।
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের দেয়া এক পরিসংখ্যানে দেখা যায়, এই হাসপাতালের জন্যে মঞ্জুরিকৃত চিকিৎসক পদের সংখ্যা হচ্ছে ৬৭জন। এর মধ্যে বর্তমানে পূরণকৃত পদ হচ্ছে ৪৪জন, শূন্য রয়েছে ২৩ পদ। এঁদের মধ্যে সিনিয়র কনসালটেন্ট ১০ জনের মধ্যে কর্মরত আছেন ৫জন, জুনিয়র কনসালটেন্ট ১২ জনের মধ্যে আছেন ৮জন, আরএমও ২ জনের মধ্যে ১ জন, ইএমও ৩টি পদের তিনটাই শূন্য, মেডিকেল অফিসার ১৪ জনের মধ্যে আছেন ১১জন, সহকারী রেজিস্ট্রার ১৪ জনের মধ্যে আছেন ১১জন, আবাসিক সার্জন পদ শূন্য, অ্যানেস্থেসিস্ট ৩জনের মধ্যে আছেন ২ জন, রেডিওলজিস্ট পদ শূন্য।
সিনিয়র স্টাফ নার্স, স্টাফ নার্স এবং সহকারী নার্স পদে শূন্য রয়েছে ১৬৩ জনের মধ্যে ৪৮ জন। উপ-সেবা তত্ত্বাবধায়ক পদ শূন্য, সিনিয়র স্টাফ নার্স ১৩৬ জনের মধ্যে কর্মরত আছেন ১০৪ জন, স্টাফ নার্স ১১জনের মধ্যে শূন্য পদ ৭টি, মিডওয়াইফ ৬টি পদের মধ্যে ছয়টিই শূন্য, আর সহকারী নার্স ৫টি পদের বিপরীতে আছে ৩জন। তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির মঞ্জুরিকৃত পদ ৯২ জনের বিপরীতে আছে ৫৯জন। আর আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে চতুর্থ শ্রেণির জনবল ৭৭ পদের বিপরীতে আছে ৪৮ জন।
এই বিপুল সংখ্যক জনবল সংকটের কারণে যেমনি রোগীদের চিকিৎসা কাজ ব্যাহত হচ্ছে, একইভাবে নার্সিং সেবা কাজও চরমভাবে ব্যাহত হচ্ছে। আর তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির জনবল সংকটের কারণে হাসপাতাল পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখা এবং অন্যান্য সেবামূলক কাজেও চরমভাবে বিঘ্ন ঘটছে।
চাঁদপুর সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. একেএম মাহাবুবুর রহমান বলেন, হাসাপাতালে চিকিৎসক, জনবল ও ওষুধ সংকট দূর করার লক্ষে মন্ত্রনালয়ে জানানো হয়েছে। এখানে বিদ্যমান লোক দিয়েই কিন্তু আমরা চিকিৎসা সেবা দিয়ে আসছি। সংকট আর বিভিন্ন প্রতিকূলতার মধ্যেও আমাদের চিকিৎসা কার্যক্রম চালাতে হয়। প্রতিদিন রোগীর এতো চাপ যা বলার মতো না। হাসপাতালটির এই সংকট মোকাবেলায় জেলাবাসিকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান তিনি।