সারিয়াকান্দি বগুড়া
গত রবি মৌসুমে ৫’শ কোটি টাকার বেশি মরিচ ও ভুট্টার ফসল বগুড়ার সারিয়াকান্দি চরাঞ্চলের কৃষকের ঘরে উঠেছে । ১৯৩ কোটি টাকার বেশি মরিচ ও ২৭০ কোটি টাকার ভুট্টার ফসল এ বছরই উৎপন্ন হয়েছে। ফলন ও দাম ভালো পেয়ে কৃষকের মুখে হাসি ফুটেছে । এতে কৃষিতে এই উপজেলায় নতুন উদ্যোক্তা সৃষ্টি হয়েছে। বৃহৎ বগুড়ার সারিয়াকান্দি যমুনা এবং বাঙালি নদীর মাটি বেশ উর্বর। এই অঞ্চলে কৃষিজমিতে প্রতিবছর বন্যায় উজান থেকে বয়ে আসা পলি জমে উর্বরতা শক্তি বৃদ্ধি পায়। ফলে উর্বর এসব জমিতে এখন সোনার ফসল ফলে। গত কয়েকবছর আগেও চরাঞ্চলের এসব জমি পতিত থাকতো। কিন্তু আধুনিক কৃষি উদ্ভাবন, বিভিন্ন ফসলের নতুন জাত আবিষ্কার, কৃষিতে নতুন উদ্যোক্তা সৃষ্টি এবং ফসলের নিবিড় পরিচর্যার কারণে এখন অনাবাদি জমিতেও প্রচুর পরিমাণে বিভিন্ন ফসল উৎপাদন হচ্ছে। উপজেলার যমুনার এবং বাঙালি চরে প্রায় সব ধরনের ফসল উৎপাদন হচ্ছে।
সারিয়াকান্দি উপজেলা কৃষি অফিসের তথ্য অনুযায়ী এ বছর ৩ হাজার ১৩০ হেক্টর জমিতে ৯ হাজার ৭৭ টন মরিচ উৎপন্ন হয়েছে। যার বর্তমান বাজার মূল্য ১৯৩ কোটি টাকা। ৮ হাজার ৬৫০ হেক্টর জমিতে ৮৬ হাজার ৫০০ মে. টন ভুট্টা উৎপন্ন হয়েছে। যার বর্তমান বাজার মূল্য ২৭০ কোটি ৩১ লাখ টাকার বেশি। ১৩ হাজার ৯৯০ হেক্টর জমিতে ২৫ হাজার ১৮২ টন বোরোধান উৎপন্ন হয়েছে। যার বর্তমান বাজার মূল্য ৭৯ কোটি টাকা। গত বছর ৩ হাজার ৬৩৫ হেক্টর জমিতে পাট উৎপন্ন হয়েছে। যার বর্তমান বাজার মূল্য ৭৩ কোটি ৬০ লাখ টাকার বেশি। এ বছরও ৩০৫০ হেক্টর জমিতে পাটচাষ হয়েছে এবং যা এখনো চলমান রয়েছে। এছাড়া গত রবি মৌসুমে ৯ হাজার ১১০ মে. টন আলু,১৯ হাজার ৮০ মে. টন পিঁয়াজ, ৫ হাজার ১২০ মে. টন সরিষা, ৪৫০ মে. টন রসুন, ৮৬৮ মে. টন গম, ১ হাজার ২০ মে. টন মসুর, ১ হাজার ১৫৫ মে. টন খেসারি, ১৫ মে. টন তিল, ৯ হাজার ৪৯০ মে. টন বিভিন্ন ধরনের শাকসবজি, ৫ হাজার ৮১০ মে. টন মিষ্টি আলুসহ বিভিন্ন ধরনের ফসল কৃষকের ঘরে উঠেছে। সে হিসাব অনুযায়ী গত রবি মৌসুমে কৃষকদের ঘরে প্রায় হাজার কোটি টাকার বেশি ফসল কৃষকের ঘরে উঠেছে।
এবিষয়ে কৃষি উদ্যোক্তা হারুন ইসলাম বলেন , পড়ালেখা করে চাকরির পিছনে না ছুটে তিনি বাড়িতে কৃষিকাজ শুরু করেছেন। এ বছর তিনি ৪ বিঘা জমিতে ভুট্টার আবাদ করে ১ লাখ পঞ্চাশ হাজার টাকার বেশি লাভ পেয়েছেন। এছাড়া জমি বছর চুক্তিতে লিজ নিয়ে প্রজেক্ট আকারে অনেকেই বিভিন্ন ধরনের ফসলের চাষাবাদ করছেন। এগুলোর মধ্যে ভুট্টা, মরিচ, মিষ্টি কুমড়া এবং পিঁয়াজ ফসলগুলো প্রোজেক্ট আকারে চাষ হয়েছে।
সারিয়াকান্দি উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ জানান, উজান থেকে প্রতিবছর পলিমাটি বয়ে আসায় এ উপজেলার মাটি বেলে দোঁআশ। আর এই বেলে দোঁআশ মাটি ফসলের জন্য খুবই উপযোগী। এ মাটিতে বিভিন্ন ধরনের ফসল উৎপাদন করে এখন কৃষকদের ভাগ্য ফিরেছে। গত কয়েকবছর ধরেই আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এখানে ভালো ফলন হচ্ছে, নতুন কৃষি উদ্যোক্তাও সৃষ্টি হচ্ছে।